সাধারণত জনগুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান বা মোড়ে গতি সীমিত রাখার জন্য গতিরোধক স্থাপন করা হয়। কিন্তু নড়াইল পৌরসভার রাস্তাগুলোতে এ নিয়মের কোনো বালাই নেই। যেখানে সেখানে প্রভাবশালীরা গায়ের জোরে গতিরোধক স্থাপন করছেন। নিজ বাড়ী বা দোকানের সামনেও গতিরোধক স্থাপন করতে কুণ্ঠাবোধ করছেন না এসব প্রভাবশালীরা। এসব গতিরোধকের উপর বা সামনে দেয়া থাকেনা কোনো রঙ। এর ফলে পথচারীরা পড়ছেন বিড়ম্বনায়, ঘটছে দুর্ঘটনা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের মহিষখোলা প্রাথমিক বিদ্যালয় টু যুব উন্নয়ন সড়কে মাত্র আধা কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে ৬ টি গতিরোধক! যার ভেতর কয়েকটি প্রয়োজনীয় হলেও অধিকাংশই অপ্রয়োজনীয়। এছাড়াও পুরাতন বাস টার্মিনাল টু চৌরাস্তা সড়কে মাত্র ১ কিলোমিটারেরও কম সড়কে স্থাপন করা হয়েছে মোট ৪ টি গতিরোধক। তন্মধ্যে থানার মোড়ে পরপর দুইটি উঁচু গতিরোধক রয়েছে, যা পার হতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয় যানবাহনের চালকদের। এবিষয়ে একজন পথচারী বলেন, এখানে একটি গতিরোধক দিতে পারতো। তা না করে পরপর, গায়ে গায়ে মিশিয়ে দুইটা গতিরোধক দিলো। ফলে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।
এছাড়াও ২ নং ওয়ার্ডের বরাশুলা এতিমখানা রোডে মাত্র ১৫০ মিটার সড়কের ভেতর স্থাপন করা হয়েছে ৪ টি গতিরোধক। যার ২ টি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে হলেও বাকি দুইটি নিজ বাড়ী ও দোকানের সামনে গায়ের জোরে স্থাপন করেছেন স্থানীয় কিছু ব্যক্তি।
আরও দেখা গেছে, নড়াইল পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের আলাদাতপুর এলাকার পাসপোর্ট অফিস সড়কে ১০০ মিটারেরও কম জায়গার ভেতর পরপর তিনটি গতিরোধক স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে নেই কোনো গতিরোধক চিহ্ন। ফলে দূর থেকে টের না পেয়ে গাড়ী চালানোর সময় অনেকেই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। সেখানকার একজন বাসিন্দা বলেন, রাস্তায় আমাদের ছেলেমেয়েরা খেলাধুলা করবে। তাই আমরা ঠিকাদারকে বলে গতিরোধক দিয়েছি। ৪ নং ওয়ার্ডের দুর্গাপুর তাহেরের মোড় থেকে নয়নপুর সড়কেও স্থাপন করা হয়েছে মাত্রাতিরিক্ত গতিরোধক। এই সড়কে কোনো সড়কবাতি না থাকায় রাতের বেলায় অন্ধকারে চলতে গিয়ে অনেকেই যানবাহন নিয়ে উল্টে পড়েন।
এছাড়াও পৌরসভার পানি মসজিদ টু পাসপোর্ট অফিস সড়কেও ৩ টি গতিরোধক রয়েছে। যার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে হলেও বাকি দুইটি সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয়।
আরও দেখা গেছে, নড়াইল পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের ডুমুরতলায় নবনির্মিত জাহাতাব উদ্দিন বেগ সড়কে স্থাপন করা হয়েছে ৩ টি গতিরোধক। যার একটি মসজিদের সামনে হলেও বাকি দুইটি প্রভাবশালীদের বাড়ির সামনে স্থাপন করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, এসব গতিরোধকের অধিকাংশই যেখানে স্থাপন করা হয়েছে সেখানে নেই কোনো গুরুত্বপূর্ণ মোড় বা স্থাপনা। রাস্তা নির্মাণের সময় স্থানীয় প্রভাবশালীরা গায়ের জোরে ঠিকাদারদের চাপ দিয়ে নিজেদের বাড়ী বা দোকানপাটের সামনে স্থাপন করেছেন এসব অপ্রয়োজনীয় গতিরোধক। আর এসব গতিরোধকের গায়ে নেই কোনো চিহ্ন। ফলে রাতের বেলায় পথচারীরা পড়ছেন বিড়ম্বনায়। যত্রতত্র এসব গতিরোধক স্থাপনের ফলে সৃষ্টি হচ্ছে ছোটখাটো দুর্ঘটনায়ও।
নড়াইলের সামাজিক সংগঠক মনিরুল ইসলাম বলেন, সাধারণ জনগণের চলাচলের রাস্তায় দু’চারজন প্রভাবশালী ব্যক্তি নিজ স্বার্থে যেখানে সেখানে গতিরোধক স্থাপন করতে পারেন না। গাড়ীর গতি সীমিতকরণে গতিরোধকের প্রয়োজন অবশ্যই রয়েছে। তবে, অপরিমাণ গতিরোধক স্থাপন কাম্য নয়। পৌর মেয়রের উচিত অবিলম্বে এসব অপ্রয়োজনীয় গতিরোধক উচ্ছেদ করা এবং গতিরোধক দেয়ার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করা।
এ বিষয়ে নড়াইল পৌরসভার মেয়র আঞ্জুমান আরা প্রতিবেদককে বলেন, নতুন নির্মাণ করা সড়কগুলোর অনেক জায়গায় অপ্রয়োজনীয় গতিরোধক স্থাপন করা হয়েছে। এটা স্থানীয় কিছু লোকেরা করেছে। যেহেতু এটা করা হয়ে গেছে তাই এখন তো আর ভেঙে দিতে পারছিনা। সেক্ষেত্রে গতিরোধকগুলোর ওপর আমরা রং করে দিবো।
সম্পাদকঃ মেহেদী হাসান
প্রকাশকঃ জি.এম এনামুল
প্রধান কার্যালয় - ৯৯,কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কাওরান বাজার,ঢাকা ১২১৫
মোবাইলঃ 01718863323
ই-মেইলঃ info@manobkollan.com